ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া আরবি ও বাংলা উচ্চারণ (ঋণ পরিশোধের আমল)
ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া আরবি ও বাংলা উচ্চারণ (ঋণ পরিশোধের আমল ও নামাজ)
ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া আরবি ও বাংলা উচ্চারণ (ঋণ পরিশোধের আমল ও নামাজ) এর নিয়ম জেনে নিন। চলতে পথে মানুষ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণ অথবা বিপদে পরে অভাবগ্রস্ত হয়ে যায়। যার ফলে তাকে ঋণ করতে হয়। যেহেতু আমাদের রিজিকের বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে নগদ অর্থ। এই অর্থ সংকটকালীন সময়ে আমরা সাধারণত ঋণ করে থাকি, কিন্তু অনেক সময় সেটা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পরে। যার কারণে ঋণ থেকে মুক্তির লাভের আশায় আমরা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বলে দেওয়া দোয়া পরে মহান আল্লাহ্র কাছে থেকে সাহায্য কামনা করতে পারি।
একবার এক লোক ঋণ পরিশোধের জন্য ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.)-এর কাছে কিছু সাহায্য চাইলেন। আলী (রা.) তাঁকে বললেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে কয়েকটি শব্দ শিখিয়ে দিয়েছিলেন, আমি কি তোমাকে সেটা শিখিয়ে দেব? সেটা পড়লে আল্লাহ তোমার ঋণমুক্তির দায়িত্ব নেবেন। তোমার ঋণ যদি পর্বতপ্রমাণ হয়, তাহলেও।’ এরপর আলী (রা.) ওই ব্যক্তিকে কথাগুলো শিখিয়ে দিলেন,
ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম; যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে।’ কেউ যেন ঋণ পরিশোধে গড়িমসি না করে সে জন্য নবিজী বলেছেন, ‘ঋণ পরিশোধ না করা কবিরা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত।’
ঋণ থেকে মুক্তির জন্য বিভিন্ন দোয়া ও আমল রয়েছে। নিম্নে একটি দোয়া উল্লেখ করা হলো-
اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكِ عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আন হারামিকা ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক’।
অর্থ : হে আল্লাহ, হারামের পরিবর্তে তোমার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট করো। আর তোমাকে ছাড়া আমাকে কারও মুখাপেক্ষী কোরো না এবং তোমার অনুগ্রহ দিয়ে আমাকে সচ্ছলতা দান করো। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৬৩; মুসনাদে আহমদ: ১৩২১)
মহানবী (সা.) আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন, যাতে তিনি ঋণে জড়িয়ে না পড়েন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) নামাজের পরে দোয়া করতেন—‘হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে গুনাহ ও ঋণ থেকে পানাহ চাচ্ছি।’ এক প্রশ্নকারী জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনি ঋণ থেকে বেশি পানাহ চান কেন?’ রাসুল (সা.) জবাব দিলেন, মানুষ ঋণগ্রস্ত হলে মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা ভঙ্গ করে। (বুখারি, হাদিস: ২৩৯৭)
পাহাড় সমান ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া
হাদিস : আলি বিন আবু তালিব (রা.) বর্ণনা করেছেন, তার কাছে এক চুক্তিবদ্ধ দাস এসে বলল, আমি চুক্তিকৃত অর্থ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়েছি। আপনি আমাকে সহযোগিতা করুন। তখন তিনি বলেছেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু বাক্য শিখিয়ে দেব না যা রাসুল (সা.) আমাকে শিখিয়েছেন? যদি তোমার ওপর পাহাড় পরিমাণ ঋণও থাকে আল্লাহ তা তোমার পক্ষ থেকে শোধ করবেন। তুমি এই (প্রথম) দোয়াটি পড়বে। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৬৩)
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজু বিকা মিন দালাইদ দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।
অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন–পীড়ন থেকে। (বুখারি, হাদিস: ২৮৯৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কাসালি, ওয়াল হারামি, ওয়াল মাছামি, ওয়াল মাগরামি।’ হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে অলসতা, অধিক বার্ধক্য, গুনাহ ও ঋণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (বুখারি, হাদিস: ৬০০৭)
হজরত আনাস (রা.)-এর বরাতে একটি হাদিস জানা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজানি, ওয়াল আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া দ্বালায়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ, নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন–পীড়ন থেকে। (বুখারি, হাদিস: ২৮৯৩)
ঋণ পরিশোধের সময় কী পড়বেন?
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু রবিআ আল-মাখযুমি (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুনাইন যুদ্ধের সময় তার কাছ থেকে ৩০ বা ৪০ হাজার দিরহাম ঋণ নিয়েছিলেন।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে তার পাওনা পরিশোধ করেন। এরপর তাকে দোয়া করে বললেন
আরবি: -بارَكَ اللَّهُ لَكَ فِي أَهْلِكَ وَمَالِكَ، إِنَّمَا جَزَاءُ السَّلَفِ الْحَمْدُ وَالأَدَاءُ
উচ্চারণ: ‘বারাকাল্লাহু লাকা ফি আহলিকা ওয়া মালিকা; ইন্নামা ঝাযাউস-সালাফিল হামদু ওয়াল-আদাউ।’
অর্থ: ‘আল্লাহ তাআলা তোমাকে তোমার পরিবার ও সম্পদে বরকত দান করুন। নিশ্চয়ই ঋণের প্রতিদান হলো- তা পরিশোধ করা এবং প্রশংসা করা।’ (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)